সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিতে বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা তুলে ধরে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অবৈধ আওয়ামী লীগ
সরকার সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রের সব সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। কিন্তু এটা শেষ নয়। এ নির্বাচন (যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন) থেকে আওয়ামী লীগের শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং যারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করছেন তাদের- যে নির্বাচন কমিশন কাকে বলে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমেরিকার নির্বাচনে যারা যে অথরিটি তারা সেটা দেখেন, সমস্ত চাপের মুখেও তারা কিন্তু অবিচল থেকেছে। সেই অবিচল থেকে তারা আজকে জনগণের যে রায়, সেটাকে আপহোল্ড করেছে- এটাই গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যদি না থাকে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না।
নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বারবার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। তিনি বলেন, তাদের (সরকার) দেখা উচিত- কীভাবে আমেরিকায় আত্মম্ভরিতার অবসান ঘটানো হয়েছে, জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকার জনগণ অনেকে কাঁদছে, তারা একটা ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে, সারা পৃথিবীর মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।
সর্বত্র ডিএনএ টেস্ট করে দলীয়করণ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সরকার তো অন্ধকারে আছে। চারদিকে কী অবস্থা, মানুষের চোখের ভাষা, দেওয়ালের লিখন পড়তে পারছে না। সরকার এমন অন্ধকার গহ্বরের মধ্যে আছে। বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। ডিএনএ টেস্ট করে চাকরি দেওয়া হয়, অর্থাৎ বিএনপির কোনো গন্ধ থাকলে তার চাকরি হয় না। সশস্ত্র বাহিনীসহ সর্বত্র একই অবস্থা। আনওয়ানটেড, আনফরচুনেড ইনসিডেন্ট।
মির্জা ফখরুল বলেন, জো বাইডেনের বক্তৃতা শুনে আমি তো ভক্ত হয়ে গেছি। আর কমলা হ্যারিসেরও। পুরো জাতির জন্য বক্তব্য। দিস উড বি স্পিরিট অব এ ডেমোক্রেটিক লিডার। আজকে ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি না করে আমরা আজকে বাংলাদেশি রাষ্ট্র তৈরি করি, মুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করি। এখানে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক রাখি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে গণতন্ত্রের যে অবস্থা, সেটা সবচেয়ে শক্তিশালী। সেখান থেকে এই শিক্ষা নিয়েছি, প্রতিষ্ঠানগুলো যদি গণতান্ত্রিক থাকে, তারা যদি দাঁড়িয়ে যায়, ইনস্টিটিউশনগুলো যদি বিল্ডআপ হয়- তা হলে কেউ জোর করে ক্ষমতা নিতে পারে না বা জোর করে কেউ কিছু করতে পারে না। এখান থেকে নির্বাচন কমিশনে যারা আছে অথবা আসবেন সবার শিক্ষা নেওয়া দরকার। ভারতের দিকে তাকিয়ে দেখেন। এত কিছুর পরও ভারতে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। তিনি বলেন, এটার কারণ হচ্ছে- যেসব দেশে গণতন্ত্র চর্চা হয়েছে দীর্ঘকাল, প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়িয়ে গেছে- এ জন্য বলে গণতন্ত্রের মূল শক্তি হচ্ছে- গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।
বাংলাদেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দেওয়ার সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আরও ত্যাগ শিকার করতে হবে। অসুস্থ অবস্থায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি এই বয়সে অন্তরীণ থাকতে পারেন; আমরা অবশ্যই ত্যাগ স্বীকার করি, আমরা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে পারব।
ঢাকা ও সিরাজগঞ্জ উপনির্বাচন প্রসঙ্গে
মির্জা ফখরুল বলেন, গত রাতেও উত্তরায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের নেতাদের বাড়ি বাড়ি গেছে। সাহাবুদ্দিন সাগর আমাদের সভাপতি (দক্ষিণখান থানা) তার বাড়িতে গিয়ে এক পুলিশ অফিসার পিস্তল ধরে তার স্ত্রীকে বলেছেন, তাকে বলবেন, সে যেন বাড়ি না আসে। তা না হলে গুলি করে মেরে ফেলব। এ রকম ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে, তার পরও কিন্তু হাজার হাজার মানুষ বেরিয়ে প্রচার করছে। সিরাজগঞ্জের প্রার্থীকে বাড়ি থেকে বেরুতে দেওয়া হয় না।
তিন দিন আটকে রেখেছে, তার পর অনেক চেষ্টা করে বের হয়েছে। এখন তাকে বের হতে দেয় না। ওখানে তো মহাশক্তিশালী, প্রভাবশালী প্রয়াত নাসিম (মোহাম্মদ নাসিম) সাহেবের ছেলে নির্বাচন করছে, তারা তো ওখানে কাউকে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না। এমন ত্রাসের রাজত্ব তারা সৃষ্টি করেছে কেউ সাহস পাচ্ছে না। আমরা বলব, জনগনকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন ঢাকা-১৮ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী আমানউল্লাহ আমান, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সাইদুর রহমান বাচ্চু প্রমুখ।
Leave a Reply